- Joined
- Jul 31, 2024
- Messages
- 102
- Reaction score
- 3
সালাফগণ ভ্রষ্টদের ব্যাপারে কক্ষনোই নীরব থাকতেন না
সালাফগণ ভ্রষ্টদের ব্যাপারে কক্ষনোই নীরব থাকতেন না, বরং তাদের তিরস্কার ও রদ্দ(খণ্ডন) করতেন এবং জনগণের সামনে তা স্পষ্ট করে দিতেন। চলুন দেখে আসা যাক হুসাইন আল-কারাবিসী ও আল-মুহাসিবির প্রতি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের অবস্থান কেমন ছিলো।
الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده أما بعد
হক্ব থেকে বাতিলকে পরিষ্কার করা এবং যারা সমালোচনার-(রদ্দ) যোগ্য তাদের সমালোচনা করা দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত । এই দায়িত্বটি আলেম ও তাদের ছাত্রদের উপর ন্যস্ত। মুহাম্মদ ইবনে বানদার আল-জুরজানি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) কে বলেছেন, "আমার উপর খুবই ভারী মনে হয় এটা বলা যে, অমুক এমন আর অমুক তেমন”। ইমাম আহমদ বললেন, “যদি তুমি চুপ করে থাকো আর আমিও চুপ করে থাকি, তাহলে অজ্ঞ ব্যক্তি কীভাবে জানবে কোনটা সঠিক আর কোনটা মিথ্যা?’’ (মাজমু আল-ফাতাওয়া ২৮/২৩১, শরহে আত-তিরমিযী ১/৩৫০)
ইমাম আহমাদকে যখন হুসাইন আল-কারাবিসী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, "সে একজন মুবতাদী' (বিদ’আতী)।" অন্য এক মজলিসে তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “হুসাইন আল-কারাবিসী থেকে সাবধান। তার সাথে কথা বলবেন না এবং যারা তার সাথে কথা বলে তাদের সাথেও কথা বলবেন না।" - তিনি এই কথা চার পাঁচবার বলেছিলেন। (তারিখে বাগদাদ ৮/৬৫)
প্রকৃতপক্ষে সালাফগণ মনে করতেন যে, আহলে বিদ‘আহকে খণ্ডনকারী(রদ্দকারী) ব্যাক্তি ঐ ব্যাক্তি থেকে উত্তম যিনি নফল রোজা, সালাত ও ইতিকাফে সারাদিন মশগুল থাকেন। ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) কে বলা হয়েছিল, "একজন ব্যক্তি নফল সালাত আদায় করে, রোযা রাখে এবং ইতিকাফ করে - সে কি আপনার কাছে বেশি প্রিয় নাকি বিদ'আতকে রদ্দকারী ব্যক্তি বেশি প্রিয়?" উত্তরে তিনি বললেন, যদি সে রোজা রাখে, নামায পড়ে এবং ইতিকাফ করে তবে তা কেবল তার নিজের জন্যই। কিন্তু যখন সে আহলুল-বিদআহকে খণ্ডন করে, সেটা [সমস্ত] মুসলমানদের জন্য কল্যান বয়ে আনে - আর সেটাই উত্তম।" (মাজমু আল-ফাতাওয়া ২৮/২৩১)
ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) হুসাইন আল-কারাবিসীর বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পরে তার কোনো প্রশংসা করেননি, তিনি তার সম্পর্কে বলেছিলেন, "কারাবিসী একজন বিদ’আতী" তিনি তার বিরুদ্ধে এবং তার সাথে বসা থেকে সতর্ক করেছিলেন। একইভাবে, তিনি আল-হারিস আল-মুহাসিবির সমাবেশ থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছিলেন। আবু জুরাহ আল-রাযী (রাহিমাহুল্লাহ) কে আল-হারিস আল-মুহাসিবি এবং তার বই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, "এই বইগুলি থেকে দূরে থাকুন, এগুলি বিদআত ও গোমরাহীর বই - বরং সালাফদের আঁকড়ে ধরুন।" এ কথা সত্য যে আল-কারাবিসী এবং আল-মুহাসিবি অনেক জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার জন্য মাশহুর ছিলেন তবে এটিও সত্য যে ইমাম আহমাদ সহ আহলুস সুন্নাহর অনেক ইমামগণ তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। যাইহোক, আল-কারাবিসী যখন বলতে শুরু করলো যে কুর’আন সৃষ্ট; এবং আল-মুহাসিবি কালাম শাস্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলো - তখনই ইমাম আহমাদ তাদের খণ্ডন করেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করেছিলেন। (আল-তাহযীব ২/১১৭, তারিখে বাগদাদ ৮/২১৫-১৬, আল-সিয়ার ১৩/১১০, ১২/৭৯)
সালাফদের একটি মানহাজ হলো বিদ’আতীদের রদ্দ করার ক্ষেত্রে তারা কখনোই বিদ’আতীদের ভালো দিক উল্ল্যেখ করবে না। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওয়ারিজদের খন্ডন করেছেন যখন তিনি যুল-খুওয়াইসিরা সম্পর্কে বলেছিলেন, “তাঁর বংশধরদের মধ্য থেকে এমন কিছু লোক বের হবে যারা কুরআন তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না – তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে (ছিটকে) বেড়িয়ে যাবে, যেভাবে তীর শিকারকে ভেদ করে (অপর দিক দিয়ে) বেড়িয়ে (চলে) যায়। তারা মুমিনকে হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজারকদের ছেড়ে দেবে। তারা আবির্ভূত হওয়া অবধি যদি আমি জীবিত থাকি, তাহলে আমি তাদের আদ জাতির মত করে হত্যা করব।” (বুখারী, নং ৩১৬৬)
অপর একটি বর্ণনায় তিনি বলেছেন, “তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে এবং তাদের রোযার তুলনায় তোমাদের রোজাকে তুচ্ছ মনে করবে।” (বুখারী, নং ৩৪১৪) অন্য একটি বর্ণনায় বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, “যেখানেই তুমি তাদের(খারেজীদের) দেখতে পাও, সেখানেই তাদেরকে হত্যা কর।” (বুখারী, নং ৩৪১৫)
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওয়ারিজদের এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী হিসেবে উল্ল্যেখ করেছেন - তারা তাদের ইবাদতে সাহাবাদেরকে ছাড়িয়ে যাবে সুতরাং এটি তাদের প্রশংসা নয়, বরং এটি ছিল মানুষকে সতর্ক করার জন্য যে, মানুষ যেন তাদের অতিরিক্ত ইবাদতের দ্বারা প্রতারিত না হয়।
এবং যখন আল-কারাবিসী এই কথাটি নিয়ে এসেছিল যে, "কুর’আন হচ্ছে সৃষ্টি", ইমাম আহমদ তখন তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং তাকে দূর দূর করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, “আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, 'যে বলেছে-কুর’আনকে সৃষ্টি করা হয়েছে', সে একজন খবিস এবং মিথ্যুক - এটা জাহমিয়াদের বক্তব্য। তখন আমি(আব্দুল্লাহ) তাকে বললাম, 'হুসাইন আল-কারাবিসী একথা বলেছেন।' তাই তিনি বললেন, 'সে মিথ্যা বলেছে - আল্লাহ তাকে অপমানিত করুন - সে একজন জঘন্য ব্যক্তি।' (আল-সুন্নাহ (১/১৬৫)
ইমাম আহমাদ ‘হারিস আল-মুহাসিবির বিরুদ্ধে আরও কঠোর ভাবে কথা বলেছেন। আলী ইবনে আবী খালিদ বলেন, আমি ইমাম আহমাদকে বললাম, আমাদের সাথে থাকা এই বৃদ্ধ লোক আমার প্রতিবেশী। আমি তাকে এই লোকটির (অর্থাৎ, আল-মুহাসিবির) বিরুদ্ধে সতর্ক করেছি কিন্তু সে তার সম্পর্কে আপনার বক্তব্য শুনতে চায়। বহু বছর আগে আপনি আমাকে (মুহাসিবির) সাথে দেখেছিলেন, তখন আপনি আমাকে বলেছিলেন, 'ওর সাথে বসো না, তার সাথে কথা বলবে না।' তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আমি তার সাথে কথা বলিনি - কিন্তু এই বৃদ্ধ লোকটি তার সাথে বসে, তাই আপনি তার সম্পর্কে কিছু বলুন?' আমি(বর্ণ্নাকারী) দেখলাম যে ইমাম আহমাদ লাল হয়ে গেছে, তার শিরা এবং চোখ রাগে ফুলে গেছে - এমন ভাবে আমি তাকে এর আগে কখনও দেখিনি।
অতঃপর তিনি সরে গিয়ে বললেন, 'আল্লাহ মুহাসিবির বিচার করবেন এবং সে ইতিমধ্যে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করেছে। আল-মুহাসিবি’কে কেউই ভালো করে চেনে না শুধুমাত্র সেই লোক ব্যতীত, যে তার সাথে উঠাবসা করেছে এবং তার ভুল খুজে পেয়েছে। তার থেকে দূরে থাকুন, তার থেকে দূরে থাকুন, তার থেকে দূরে থাকুন! যিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর সম্পর্কে অবহিত তিনি ছাড়া কেউ তাঁকে চেনে না। আল-মাগাজিলি তার সাথে বসলেন, ইয়াকুব তার সাথে বসলেন এবং (অমুক-অমুক) তার সাথে বসলেন - এবং সে(মুহাসিবি) তাদের সবাইকে জাহমের বিশ্বাসের দিকে নিয়ে গেল, ফলে তারা মুহাসিবির কারণে পথভ্রষ্ট হলো ও ধ্বংস হয়ে গেল।
তখন বৃদ্ধ তাকে বললেন, হে আবু আবদিল্লাহ! কিন্তু মুহাসিবি তো হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি ধার্মিক ও ভদ্র এবং নম্রতা প্রদর্শন করেন ইত্যাদি।’ আবু আবদিল্লাহ (আহমাদ) রাগান্বিত হয়ে বললেন, ‘তার নম্রতা, তাকওয়া ও ভদ্রতা দেখে প্রতারিত হবেন না। সে তার মাথা নিচু করে বলে প্রতারিত হবেন না, কারণ সে একজন মন্দ লোক। একান্তই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছাড়া তাকে কেউ চেনে না - তার সাথে কথা বলবেন না, সে সম্মানের যোগ্য নয়। তাহলে আপনি আমাকে বলেন যে! যদি একজন বিদআতী লোক রাসূলুল্লাহ-এর একটি হাদীস বর্ণনা করে তাহলে কি আপনি তার সাথে বসবেন? না, সে কোন সম্মানের যোগ্য নয় এবং সে যা করে তার জন্য ‘তার চোখ’ অন্ধও নয়।’’ (তাবাকাতুল-হানাবিলাহ, ১/২৩৩)
তাহলে, আল-কারাবিসী ও আল-মুহাসিবির বিরুদ্ধে ইমাম আহমদের অবস্থান সম্পর্কে সংশয়বাদীরা কী বলবেন? তিনি তো তাদের সম্পর্কে একটি ভাল শব্দও উল্লেখ করেননি । যেমনঃ তারা প্রচুর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন বা অন্যকিছু ?। (তারীখে বাগদাদ, ৮/৬৪, আল-সিয়ার, ১২/৭৯)
আল্লাহ ইমাম আহমাদের প্রতি রহম করুন - তিনি যদি আমাদের সময়ে উপস্থিত থাকতেন, তবে তিনি কঠোরতা, অসহিষ্ণুতা এবং 'ত্রুটি' আছে এমন জ্ঞানী ব্যক্তিদের সম্মান না করার অভিযোগে অভিযুক্ত হতেন। হিযবিয়ূনরা তাকে সহ্য করবে না কারণ ইমাম আহমাদ, আহলুল-বিদাআহ ও আহলুল-হাওয়া-এর প্রশংসা করতেন না, বরং তিনি তাদের খণ্ডন করতেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করতেন-যেমন এই যুগে হিজবিয়ূনরা শায়খ রাবী'র মতকে সহ্য করতে পারে না, ঠিক তেমনি ভাবে শাইখ মুকবিল, শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামি', শাইখ আহমাদ আল-নাজমী, শাইখ যায়দ আল-মাদখালী, প্রমুখ’দের কেও। কারণ তারা ভ্রষ্ট, বিদআতী এবং বিশ্বাসঘাতকদের তোষামোদ বা প্রশংসা না করেই খণ্ডন ও সতর্ক করেছেন।
অতপর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত সৃষ্টির পালনকর্তা । সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মাদ সাঃ এর উপর ও তার সাহাবীগণের উপর ।
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد
জয়নাল বিন তোফাজ্জল
ইসলামিক স্টাডিস (বিভাগ), দনিয়া ইউনিভার্সিটি ঢাকা