Welcome!

By registering with us, you'll be able to discuss, share and private message with other members of our community.

SignUp Now!
Headlines
No news have been created yet.

রহমান কি আরশের উপরে উঠেছেন ? তৃতীয় পর্ব

Admin
Author

Admin

Administrator
Staff member
Joined
Jul 31, 2024
Messages
102
Reaction score
3
আলহামদুলিল্লাহ পূর্বের দুটি পর্বে আল্লাহ সবকিছুর উপরে থাকা এবং আরশের উপর উঠা নিয়ে এবং ‘ইস্তেওয়া’ শব্দের আভিধানিক ও ব্যবহারবিধি অনুযায়ী এর অর্থ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
কুরআনুল কারীমের বহু আয়াতে আল্লাহ তা'আলাকে সবকিছুর উপরে অর্থাৎ যাতে পরোক্ষভাবে আল্লাহ তা'আলাকে তার ‘আরশের উপর থাকার বিষয়টি সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন,

১. তাঁর দিকে আমল উত্থিত হয়, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّلِحُ يَرْفَعُةُ
“তাঁরই দিকে পবিত্র বাণীসমূহ হয় উঠে যায় এবং সৎ কাজ, তিনি তা করেন উন্নীত।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ১০] ইমাম তাবারী বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর দিকেই উঠে যায় বান্দা কর্তৃক তাঁকে স্মরণ করা এবং বান্দা কর্তৃক তাঁর প্রশংসা করা।(১) অনুরূপভাবে আল্লাহর বাণী,
إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِايَتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمَ الْخِيَاطِ
“নিশ্চয় যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে এবং তা সম্বন্ধে অহংকার করে, তাদের জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না- যতক্ষণ না সূঁচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে।” [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ৪০]

ইমাম আবু সা'ঈদ উসমান ইবন সা'ঈদ আদ-দারেমী বলেন, এ আয়াত্ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা সকল আসমানের উপরে; কারণ তিনি যদি আসমানের উপরে না হতেন তাহলে রূহ ও আমল উপরের আসমানের উপরের দিকে নিয়ে উঠানো হতো না, কোনো কাওমের জন্য আসমানের দরজা বন্ধ করা হতো না, অন্যদের জন্যও খোলা হতো না ।(২)

২. আল্লাহ তা'আলা তাঁর কোনো কোনো বান্দাকে তাঁর দিকে উপরে উঠিয়ে নিয়েছেন বলে ঘোষণা করেছেন, যা দ্বারা তাঁর উপরে থাকা প্রমাণিত হয়। যেমন, এক আয়াতে এসেছে,
إِذْ قَالَ اللَّهُ يَعِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَى
“স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ বললেন, ‘হে ‘ঈসা! নিশ্চয় আমি আপনাকে পরিগ্রহণ করব, আমার নিকট আপনাকে উঠিয়ে নিব।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫৫]

• অপর আয়াতে এসেছে,
بَل رَّفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا
“বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আন-নিসা আয়াত: ১৫৮]

৩. তার দিকে ফিরিশতাগণ উঠে যান, সেদিকে আমল নামা উঠানো হয়। যেমন, এক আয়াতে এসেছে,
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ
“তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন, তারপর সব কিছুই তাঁর সমীপে উত্থিত হবে এমন এক দিনে যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনা অনুসারে হাজার বছর।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ০৫]

• অনুরূপ অপর আয়াতে এসেছে,
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنزِلُ مِنَ السَّمَاءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا وَهُوَ الرَّحِيمُ الْغَفُورُ
“তিনি জানেন যা যমীনে প্রবেশ করে এবং যা তা থেকে নির্গত হয়, আর যা আসমান থেকে নাযিল হয় এবং যা কিছু তাতে উত্থিত হয়। আর তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় ক্ষমাশীল।” [সূরা সাবা, আয়াত: ০২]
• অনুরূপ অপর আয়াতে এসেছে,
رمِنَ اللَّهِ ذِي الْمَعَارِجِ تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
“এটা আসবে আল্লাহর কাছ থেকে, যিনি ঊর্ধ্বারোহনের সোপানসমূহের অধিকারী। ফিরিশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।” [সূরা আল-মা'আরিজ, আয়াত: ৩-৪]
ইমাম মুজাহিদ বলেন, 'যিল মা'আরিজ' এর অর্থ, ফিরিশতাগণ আল্লাহর দিকে উঠে যান।(৩) তাবারী বলেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘ফিরিশতাগণ এবং রূহ' অর্থাৎ জিবরীল তাঁর দিকে অর্থাৎ মহান আল্লাহর দিকে উঠে যান, এখানে তাঁর বলে আল্লাহকে বুঝানো হয়েছে।(৪)

৪. আল্লাহ তা'আলা মানুষের রব, তারা তাকে তাদের উপরে থেকে ভয় পায়, যেমন,
• অন্য আয়াতে এসেছে,
يَخَافُونَ رَبَّهُم مِّن فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
“তারা ভয় করে তাদের উপরস্থ তাদের রবকে এবং তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তারা তা করে।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫০]

ইমাম ইবন খুযাইমাহ বলেন, মহান আল্লাহ আমাদেরকে এ আয়াতে জানালেন যে, আমাদের রব তার ফিরিশতাদের উপরে, আসমানসমূহের উপরে, যমীনে বিচরণকারী সবকিছুর উপরে। তিনি আরও জানিয়ে দিলেন যে, ফিরিশতাগণ তাদের উপরে থাকা তাদের রবকে ভয় করেন।(৫)

৫. আল্লাহ তা'আলাকে আসমানের উপরে বলে ঘোষণা করা হয়েছে, আল্লাহ বলেন,
أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ أَمْ أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرٍ
“তোমরা কি এ থেকে নির্ভয় হয়েছ যে, যিনি আসমানে রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে সহ যমীনকে ধ্বসিয়ে দেবেন, অতঃপর তা হঠাৎ করেই থর থর করে কাঁপতে থাকবে? অথবা তোমরা কি এ থেকে নির্ভয় হয়েছ যে, আসমানে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের উপর কংকরবর্ষী ঝঞ্ঝা পাঠাবেন? তখন তোমরা জানতে পারবে কিরূপ ছিল আমার সতর্কবাণী!” [সূরা আল-মুলক, আয়াত : ১৬-১৭]

উল্লেখ্য, কোথাও কোথাও কুরআনের আয়াত ও হাদীসে আল্লাহ তা'আলাকে আসমানে বলা হয়েছে, আর আমরা অপরাপর আয়াত ও হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে জেনেছি যে, আল্লাহ তা'আলা 'আরশের উপর উঠেছেন এবং তিনি 'আরশের উপরই আছেন। এ দু'য়ের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কারণ,

এক. আসমান বলতে উপরিভাগ বুঝায়; সুতরাং যেখানে যেখানে আল্লাহ তা'আলাকে আসমানে বা ‘সামা’তে বলা হয়েছে তার অর্থ সর্বোচ্চ স্থান 'আরশের উপর বুঝে নিতে হবে।
দুই. কোথাও কোথাও আরবী 'ফী' শব্দ এসেছে, যার অর্থ ‘মধ্যে' হওয়া যেমন বুঝায় তেমনি তার অর্থ 'আলা' বা 'উপরে'ও হয়। যেমন আল্লাহর বাণী, “সুতরাং তোমরা যমীনের উপর বিচরণ কর চারমাস।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ০২] অনুরূপ অন্য আয়াত, “সুতরাং আমি অবশ্যই তোমাদেরকে খেজুর গাছের কাণ্ডের উপর শূলিতে চড়াব।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত : ৭১](৬)

৬. আল্লাহ তা'আলা কিতাব, ওহী, ফিরিশতা ইত্যাদি নাযিল করেন বলে ঘোষণা করেছেন, যেমন,
• আল্লাহ বলেন, “আর আমরা কুরআন নাযিল করেছি খণ্ড খণ্ডভাবে; যাতে আপনি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারেন ক্রমে ক্রমে এবং আমরা তা পর্যায়ক্রমে নাযিল করেছি।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০৬]
• অনুরূপ অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যিনি যমীন ও সমুচ্চ আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর কাছ থেকে এটা নাযিলকৃত।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ০৪]
• অনুরূপ অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর নিশ্চয় এটা (আল-কুরআন) সৃষ্টিকুলের রব হতে নাযিলকৃত।” [সূরা শু'আরা, আয়াত: ১৯২]
• অনুরূপ অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এ কিতাব সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া, এতে কোনো সন্দেহ নেই।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত : ০২]
• অনুরূপ অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এ কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছ থেকে নাযিলকৃত।” [সূরা আহকাফ, আয়াত:
• অনুরূপ অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এ কিতাব নাযিল হয়েছে আল্লাহর কাছ থেকে যিনি পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ।” [সূরা গাফির, আয়াত: ০২]
• অনুরূপ অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এটা রহমান, রহীমের কাছ থেকে নাযিলকৃত।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ০২]
• অনুরূপ অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না সামনে থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, চিরপ্রশংসিতের কাছ থেকে নাযিলকৃত।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪২]
• অনুরূপ অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এটা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাযিলকৃত।” [সূরা ওয়াকি'আহ, আয়াত: ৮০; হাক্কাহ, আয়াত: ৪৩]
• অনুরূপ অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আমরা আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি ক্রমে ক্রমে।” [সূরা আল-ইনসান/ আদ-দাহর, আয়াত: ২৩]

রব্বুল আলামীনের কাছ থেকে নাযিল হওয়ার দ্বারা দু'টি বিশাল বিষয় সাব্যস্ত হচ্ছে, এক. তিনি আল্লাহ স্বয়ং কুরআন নিয়ে কথা বলেছেন, তাঁর কাছ থেকে তা নাযিল হয়েছে, তাঁর কাছ থেকেই তা শুরু হয়ে এসেছে। দুই. মহান আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির উপরে হওয়া। কারণ, নাযিল হওয়া যা স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধি বুঝে তা উপর থেকে নিচের দিকে যাওয়াকে বুঝায়।(৭)

৭. মূসা 'আলাইহিস সালাম আল্লাহকে আসমানের উপরে বলার কারণে ফির'আউন সেটা নিয়ে উপহাস করেছিল, যা আল্লাহ তা'আলা বর্ণনা করছেন, “ফির'আউন আরও বলল, 'হে হামান! আমার জন্য তুমি নির্মাণ কর এক সুউচ্চ প্রাসাদ যাতে আমি অবলম্বন পাই আসমানে আরোহনের অবলম্বন, যেন দেখতে পাই মূসার ইলাহকে; আর নিশ্চয় আমি তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।” [সূরা গাফির, আয়াত : ৩৭] আয়াত স্পষ্ট করে জানাচ্ছে যে, মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবকে 'আরশের উপর বলার পরই ফির'আউন সেটা নিয়ে এক ধরনের উপহাসে নেমেছিল। সে বলেছিল হে হামান, আমার জন্য সিড়ি বানাও আমি তাকে দেখতে যাব।(৮)

সুতরাং যারা আল্লাহকে "আরশের উপরে বিশ্বাস করতে পারে না তারা মূসার বিশ্বাসের বিরোধিতা করেছে আর ফির'আউনের সাথে তাদের বিশ্বাসকে এক করে নিয়েছে। আর এজন্যই যারা আল্লাহকে 'আরশের উপরে উঠা ও সেখানে থাকাকে অস্বীকার করে এমন জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায়কে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা'আত সর্বদা ফির'আউনী গোষ্ঠী বলতেন।(৯)

৮. তিনি নিজেকে সর্বোচ্চ সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যেমন,
“আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।” [সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ২৫৫]
তিনি আরও বলেন, “আর নিশ্চয় আল্লাহ্, তিনিই সমুচ্চ, সুমহান।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৬২; লুকমান, আয়াত : ৩০]
তিনি আরও বলেন, “আর তিনি সমুচ্চ, মহান।" [সূরা সাবা, আয়াত: ২৩]
আরও বলেন, “সুতরাং যাবতীয় কর্তৃত্ব সমুচ্চ, মহান আল্লাহরই।” [সূরা গাফির, আয়াত: ১২]
আরও বলেন, “আসমানসমূহে যা আছে ও যমীনে যা আছে তা তাঁরই। তিনি সুউচ্চ, সুমহান।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ০৪]
উপরের আয়াতগুলোতে যে 'আল-'আলীয়্যি' নামটি এসেছে, ইমাম তাবারী তার অর্থ করেছেন, আল-'উলু ওয়াল ইরতিফা' অর্থাৎ সুউচ্চ ও উপর।(১০)
আরও বলেন, “আপনি আপনার সুমহান রবের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন।” [সূরা আ'লা, আয়াত: ০১]
আরও বলেন, “শুধু তার মহান রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়।” [সূরা আল-লাইল, আয়াত: ২০]

ইমাম ইবন খুযাইমাহ বলেন, 'আল-আ'লা' শব্দটির আভিধানিক অর্থই হচ্ছে, তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে, সবকিছুর উপরে। আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুরআনে এটা দিয়ে নিজের গুণ বর্ণনা করেছেন, আমাদের জানিয়েছেন যে, তিনি সর্বোচ্চ পবিত্র মহান সত্তা। হে বিবেকবান, যিনি সর্বোচ্চ সত্তা তিনি কি সবকিছুর উপরে হবেন না?(১১)

এ আয়াতসমূহে মহান আল্লাহকে সর্বোচ্চ সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত আল্লাহ তা'আলার জন্য তিন প্রকার উচ্চতা সাব্যস্ত করেন : এক. সত্তাগতভাবে অবস্থানের দিক থেকে তিনি সবকিছুর উপরে। দুই. সম্মান ও মর্যাদাগতভাবে তিনি সবকিছুর উপরে। তিন. ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির দিক থেকে তিনি সবকিছুর উপরে।(১২)

৯. তিনি সর্বোচ্চ সত্তা, তাঁর নিকটে তিনি তাঁর কোনো কোনো সৃষ্টিজীবকে রেখেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। যদি তার জন্য স্থান নির্ধারণ না করা হয়, "আরশের উপরে না বলা হয়, তাহলে সেটা ম্ভব হয় না। আল্লাহ তা'আলা বহু আয়াতে তাঁর কাছে যারা আছেন তাদের কথা ঘোষণা করেছেন। যেমন,

• ফিরিশতাগণ তাঁর নিকটে রয়েছে, তিনি বলেন,
“নিশ্চয় যারা আপনার রবের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদাতের ব্যাপারে অহঙ্কার করে না। আর তারা তাঁরই তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁরই জন্য সাজদাহ করে।” [সূরা আল- .আ'রাফ, আয়াত: ২০৬]
“অতঃপর যদি তারা অহংকার করে, তবে যারা আপনার রবের নিকটে রয়েছে তারা তো দিন ও রাতে তাঁর পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তিবোধ করে না।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৮]
“আর আসমানসমূহ ও যমীনে যারা আছে তারা তাঁরই; আর তাঁর সান্নিধ্যে যারা আছে তারা অহংকার-বশে তাঁর ইবাদাত করা হতে বিমুখ হয় না এবং বিরক্তিবোধ করে না।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১৯]

• জান্নাত তাঁর নিকটে, তিনি বলেন, ফির'আউনের স্ত্রী দো'আ করে বলেছিলেন,
“হে আমার রব! আপনার সন্নিধানে জান্নাতে আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করুন।” [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ১১]

• জান্নাতে যারা যাবে তারা তাঁর পড়শিত্ব ও নিকটে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করবে।
“আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য তাদের রবের কাছে আছে উচ্চ মর্যাদা!” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ০২]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে, যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহা অধিপতি (আল্লাহ)র সান্নিধ্যে।” [সূরা আল-ক্বামার, আয়াত: ৫৪-৫৫]

যদি নিকটে থাকা বলা দ্বারা সাধারণ কোনো অর্থ হয়, তাহলে আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের বিশেষ নৈকট্যের কোনো মূল্য থাকে না। কারণ, সাধারণ অর্থে সকলেই তাঁর নিকটে। কিন্তু এ তো বিশেষ নৈকট্য, আর তা হচ্ছে "আরশের কাছে অবস্থানকারী ফিরিশতা ও জান্নাতের অধিবাসী ঈমানদারগণের জন্য বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার স্থান। তারা সর্বোচ্চ পবিত্র মহান সত্তার নৈকট্য লাভে ধন্য হবে। এর বিপরীতে যারা কুফুরী করবে, অহংকার করবে তারা তার নৈকট্য লাভ থেকে বঞ্চিত হবে।(১৩)

১০. বান্দা কর্তৃক আল্লাহর দিকে তাকানোর বিষয়টি দ্বারাও সাব্যস্ত হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা কোনো এক দিকে আছেন, আর সেদিকেই তারা তাকাবে, আর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তা হবে উপরে 'আরশের দিকে। তাই যেসব আয়াতে আল্লাহর দিকে তাকানোর কথা রয়েছে সেসব আয়াত প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ তাঁর ‘আরশের উপর। আল্লাহ বলেন, “সেদিন কোনো কোনো মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে।” [সূরা আল-ক্বিয়ামাহ, আয়াত: ২৩]

১১. সেসব ভাষ্যে যাতে আল্লাহ তা'আলা নিজেকে 'আরশের অধিপতি হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন এবং অপর কোনো ইলাহ যদি থাকতো তবে সেও যে 'আরশের আধিপত্য লাভের চেষ্টা করতো এটা তুলে ধরেছেন; যা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা'আরা তাঁর 'আরশের উপর রয়েছেন। যেমন,

“অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলুন, “আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা "আরশের রব'।" [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত : ১২৯]
“আর তিনিই আসমানসমূহ ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, আর তাঁর 'আরশ ছিল পানির উপর, তোমাদের মধ্যে কে আমলে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য।” [সূরা হূদ, আয়াত: ০৭]
“বলুন, 'যদি তাঁর সাথে আরও ইলাহ্ থাকত যেমন তারা বলে, তবে তারা 'আরশ-অধিপতির (নৈকট্য লাভের) উপায় খুঁজে বেড়াত'।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত : ৪৩]
“যদি এতদুভয়ের (আসমান ও যমীনের) মধ্যে আল্লাহ্ ব্যতীত আরও অনেক ইলাহ্ থাকত, তাহলে উভয়ই বিশৃংখল হত। অতএব, তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে ‘আরশের অধিপতি আল্লাহ্ কতই না পবিত্র।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২২]
“বলুন, সাত আসমান ও মহা-‘আরশের রব কে?” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৮৬]
“সুতরাং আল্লাহ্ মহিমান্বিত, প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই; তিনি সম্মানিত "আরশের রব।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১১৬]
“আল্লাহ্, তিনি ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই, তিনি মহা আরশের রব।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ২৬]
“আর আপনি ফিরিশতাদেরকে দেখতে পাবেন যে, তারা 'আরশের চারপাশে ঘিরে তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। আর তাদের মধ্যে বিচার করা হবে ন্যায়ের সাথে এবং বলা হবে, সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর প্রাপ্য।” [সূরা আয- যুমার, আয়াত: ৭৫]
“যারা 'আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে আছে, তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাঁর উপর ঈমান রাখে, আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।” [সূরা গাফির, আয়াত: ০৭]
“তিনি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, ‘আরশের অধিপতি, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছে স্বীয় আদেশ হতে ওহী প্রেরণ করেন, যাতে তিনি সতর্ক করেন সম্মেলন দিবস সম্পর্কে।” [সূরা গাফির, আয়াত: ১৫]
“তারা যা আরোপ করে তা থেকে আসমানসমূহ ও যমীনের রব এবং 'আরশের রব পবিত্র- মহান।" [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৮২]
"আর ফিরিশতাগণ আসমানের প্রান্তদেশে থাকবে এবং সেদিন আটজন ফিরিশতা আপনার রবের 'আরশকে ধারণ করবে তাদের উপরে।” [সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত: ১৭]
“যে সামর্থ্যশালী, আরশের মালিকের কাছে মর্যাদা সম্পন্ন।” [সূরা আত-তাকওয়ীর,আয়াত: ২০]
“আরশের অধিকারী ও সম্মানিত।” [সূরা আল-বুরূজ, আয়াত: ১৫]

এগুলো দ্বারা রাব্বুল আলামীন নিজেকে সর্বোপরে থাকা সাব্যস্ত করছেন। আর সর্বোপরে কোথায় পূর্বে বর্ণিত আয়াতসমূহে ব্যক্ত করেছেন, তা হচ্ছে 'আরশের উপর। এতসব দলীল সত্ত্বেও জাহমিয়্যাহ ও তাদের মতাবলম্বিরা আল্লাহ তা'আলাকে সত্তাগতভাবে অবস্থানের দিক থেকে তাকে সর্বোচ্চ সত্তা মানে না। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর আয়াতের অর্থকে অস্বীকার করে।


১. তাফসীর তাবারী ( ১২/২২)।
২. আদ-দারেমী, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ, পৃ. ৩৫।
৩. বুখারী (১৩/৪২৬); তা'লীক।
৪. জামে'উল বায়ান (১৪/২৯)।
৫. ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ পৃ. ১১১।
৬. দেখুন, বাইহাকী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত: ৫৩১; আত-তাইমী, মাজাযুল কুরআন (২/২৩); শাওকানী, ফাতহুল ক্বাদীর (৩/৩৭৬)।
৭. আল-কাফিয়াতুশ শাফিয়া, ১০৯-১১০।
৮. দেখুন, তাফসীর তাবারী (১২/২৪); দারেমী, আর-রাদ্দু 'আলাল জাহমিয়্যাহ, ইবন আব্দিল বার, আত-তামহীদ (৭/১৩৩); আশ'আরী, আল-ইবানাহ ১০৬; আবুল কাসেম আত-তাইমী, আল-হুজ্জাহ ফী বায়ানিল মাহাজ্জাহ (২/১১৫); ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ পৃ. ১১৪-১১৫; সা'দী, তাওদ্বীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া পৃ. ১০৭।
৯. ইবনুল কাইয়্যেম, ই'লামুল মুওয়াক্কেঈন (২/৩১৭)।
১০. তাফসীর আত-তাবারী, (৩/২/১৯), (১৩/২৫, ৫৯)।
১১. ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ পৃ. ১১২।
১২. আহমাদ ইবন ‘ঈসা, তাওদ্বীহুল মাকাসিদ শারহুল কাফিয়াতুশ শাফিয়া, ১৮০-১৮১।
১৩. ইবন তাইমিয়্যাহ, মাজমূ' ফাতাওয়া (৫/১৬৫-১৬৬)।

 
Back
Top