Welcome!

By registering with us, you'll be able to discuss, share and private message with other members of our community.

SignUp Now!
Headlines
No news have been created yet.

আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদা পর্ব ১

Admin
Author

Admin

Administrator
Staff member
Joined
Jul 31, 2024
Messages
102
Reaction score
3
ভূমিকা :

আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য (যারিয়াত ৫৬)। আর ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম দু’টি শর্ত হ’ল- (১) যাবতীয় ইবাদত শুধুমাত্র তাঁর জন্যই নিবেদিত হ’তে হবে। যেমন- ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ-যাকাত, নযর-নিয়ায, যবেহ, কুরবানী, ভয়-ভীতি, সাহায্য, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি। (২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুকরণ, অনুসরণ করতে হবে এবং তিনি যেভাবে ইবাদত করতে বলেছেন সেভাবেই তা সম্পাদন করতে হবে। উপরোক্ত শর্ত দু’টির সাথে আক্বীদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ হওয়া অতীব যরূরী। অত্র প্রবন্ধে আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ) সম্পর্কিত কয়েকটি ভ্রান্ত আক্বীদা আলোচনা করা হ’ল-

অনেকের বিশ্বাস আছে যে, (১) আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। অথচ মহান আল্লাহ বলছেন, তিনি আরশের উপর সমাসীন। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে ৭টি আয়াত বর্ণিত হয়েছে।[1] রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও বলেছেন যে, আল্লাহ আসমানে আছেন। সাহাবী (রাঃ) এবং তাবেঈগণ সকলেই বলেছেন আল্লাহ আসমানে আছেন। তাছাড়া সকল ইমামই বলেছেন, আল্লাহ আসমানে আছেন। এরপরেও যদি বলা হয়, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাহ’লে কি ঈমান থাকবে এবং আমল কবুল হবে?

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান- একথা ঠিক নয়, বরং পবিত্র কুরআন বলছে, আল্লাহ আরশে সমাসীন। এ মর্মে বর্ণিত দলীলগুলো নিম্নরূপ-

(১) আল্লাহ বলেন, إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِيْ سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ. ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’ (আ‘রাফ ৭/৫৪)

(২) ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’ (ইউনুস ১০/৩)

(৩) ‘আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হ’লেন’ (রা‘দ ১৩/২)

(৪) ‘দয়াময় (আল্লাহ) আরশে সমাসীন’ (ত্ব-হা ২০/৫)

(৫) ‘তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ’ (ফুরক্বান ২৫/৫৯)

(৬) ‘আল্লাহ তিনি, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’ (সাজদাহ ৩২/৪)

(৭) ‘তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন’ (হাদীদ ৫৭/৪)

উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা আরশে সমাসীন আছেন। কিভাবে সমাসীন আছেন, একথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন,الاستواء معلوم والكيف مجهول والإيمان به واجب والسؤال عنه بدعة. ‘ইসতেওয়া বা সমাসীন হওয়া বোধগম্য, এর প্রকৃতি অজ্ঞাত, এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদ‘আত’।[2]

আল্লাহ তা‘আলা আসমানের উপর আছেন। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন,

أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَّخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُوْرُ، أَمْ أَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُّرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُوْنَ كَيْفَ نَذِيْرِ-

‘তোমরা কি (এ বিষয়ে) নিরাপদ হয়ে গেছ যে, যিনি আকাশের উপর রয়েছেন তিনি তোমাদের সহ ভূমিকে ধসিয়ে দিবেন না? আর তখন ওটা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। অথবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশের উপর যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী বঞ্ঝাবায়ু প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে কিরূপ ছিল আমার সতর্কবাণী’? (মুলক ৬৭/ ১৬-১৭)

২. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিছু সৃষ্টিকে উপরে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, بَل رَّفَعَهُ اللهُ إِلَيْهِ ‘বরং আল্লাহ তাকে (ঈসাকে) নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন’ (নিসা ৪/১৫৮)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, إِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسَى إِنِّيْ مُتَوَفِّيْكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ. ‘স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলে নিচ্ছি’ (আলে ইমরান ৩/৫৫)

৩. আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরে আছেন, এর প্রমাণে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَضَى اللهُ الْخَلْقَ كَتَبَ فِيْ كِتَابِهِ، فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ : إِنَّ رَحْمَتِيْ غَلَبَتْ غَضَبِيْ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ মাখলূক সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ করলেন, তখন তাঁর কাছে আরশের উপর রক্ষিত এক কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন- অবশ্যই আমার করুণা আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে’।[3]

৪. আমরা দো‘আ করার সময় দু’হাত উত্তোলন করে আল্লাহর নিকট চাই। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ আরশের উপর আছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ حَيِيٌّ كَرِيْمٌ يَسْتَحْيِيْ إِذَا رَفَعَ الرَّجُلُ إِلَيْهِ يَدَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا خَائِبَتَيْنِ-

সালমান ফারেসী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জাশীল ও মহানুভব। যখন কোন ব্যক্তি তাঁর নিকট দু’হাত উত্তোলন করে দো‘আ করে, তখন তাকে শূন্য হাতে ব্যর্থ মনোরথ করে ফেরত দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন’।[4]

৫. প্রত্যেক রাতে আল্লাহ তা‘আলার দুনিয়ার আসমানে নেমে আসা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি আরশের উপর সমাসীন। এর প্রমাণ রাসূল (ﷺ)-এর নিম্নোক্ত হাদীস :

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُوْلُ : مَنْ يَّدْعُوْنِيْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছ যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দান করব। কে আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’।[5]

৬. মু‘আবিয়া বিন আল-হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَتْ لِيْ جَارِيَةٌ تَرْعَى غَنَمًا لِىْ قِبَلَ أُحُدٍ وَالْجَوَّانِيَّةِ فَاطَّلَعْتُ ذَاتَ يَوْمٍ فَإِذَا الذِّئْبُ قَدْ ذَهَبَ بِشَاةٍ مِنْ غَنَمِهَا وَأَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِىْ آدَمَ آسَفُ كَمَا يَأْسَفُوْنَ لَكِنِّىْ صَكَكْتُهَا صَكَّةً فَأَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَظَّمَ ذَلِكَ عَلَيَّ. قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلاَ أُعْتِقُهَا؟ قَالَ ائْتِنِيْ بِهَا فَأَتَيْتُهُ بِهَا. فَقَالَ لَهَا : أَيْنَ اللهُ؟ قَالَتْ فِي السَّمَاءِ. قَالَ مَنْ أَنَا؟ قَالَتْ أَنْتَ رَسُوْلُ اللهِ. قَالَ أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ-

‘আমার একজন দাসী ছিল। ওহুদ ও জাওয়ানিয়্যাহ (ওহুদের নিকটবর্তী একটি স্থান) নামক স্থানে সে আমার ছাগল চরাত। একদিন দেখি, নেকড়ে আমাদের একটি ছাগল ধরে নিয়ে গেছে। আমি একজন আদম সন্তান (সাধারণ মানুষ)। তারা যেভাবে ক্রদ্ধ হয় আমিও সেভাবে ক্রদ্ধ হই। কিন্তু আমি তাকে এক থাপ্পড় মারি। অতঃপর রাসূল (ﷺ)-এর নিকট আসলে একে আমি সাংঘাতিক (অন্যায়) কাজ বলে গণ্য করি। তাই আমি বলি যে, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি কি তাকে আযাদ করব না? তিনি বললেন, তাকে আমার নিকট নিয়ে আস। আমি তাকে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নিকট নিয়ে আসলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আসমানে। তিনি (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কে? তখন সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)। তখন নবী করীম (ﷺ) বললেন, তাকে মুক্তি দিয়ে দাও, কারণ সে একজন ঈমানদার নারী’।[6]

৭. বিদায় হজ্জের ভাষণে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, তখন কি বলবে? ঐ সময় উপস্থিত সাহাবীগণ বলেছিলেন, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি আপনার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন। একথা শুনার পর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাঁর হাতের আঙ্গুল আসমানের দিকে উত্তোলন করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ! তাদের কথার উপর সাক্ষি থাক’।[7]

৮. আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,

كَانَتْ زَيْنَبُ تَفْخَرُ عَلَى أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَقُوْلُ: زَوَّجَكُنَّ أَهَالِيْكُنَّ وَزَوَّجَنِي اللهُ تَعَالَى مِنْ فَوْقِ سَبْعِ سَمَاوَاتٍ.

‘যয়নব (রাঃ) নবী করীম (ﷺ)-এর অন্যান্য স্ত্রীগণের উপর গর্ব করে বলতেন যে, তাঁদের বিয়ে তাঁদের পরিবার দিয়েছে, আর আমার বিয়ে আল্লাহ সপ্ত আসমানের উপর থেকে সম্পাদন করেছেন’।[8]

৯. ইসরা ও মি‘রাজ-এর ঘটনায় আমরা লক্ষ্য করি যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে যখন একের পর এক সপ্ত আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল নবী-রাসূলগণের এবং আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য সপ্ত আসমানের উপর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর যখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছালাত নিয়ে মূসা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখন মূসা (আঃ) রাসূল (ﷺ)-কে বলেছিলেন, তোমার উম্মত ৫০ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে সক্ষম হবে না। যাও আল্লাহর নিকট ছালাত কমিয়ে নাও। এরপর কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্ত হয়। এরপর মূসা (আঃ) আরও কমাতে বলেছিলেন, কিন্তু রাসূল (ﷺ) লজ্জাবোধ করেছিলেন।[9] এ সময় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ছালাত কমানোর জন্য সপ্ত আকাশের উপর উঠতেন। আবার ফিরে আসতেন মূসা (আঃ)-এর নিকট ষষ্ঠ আসমানে। এ দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরে আছেন।

১০. ফেরাঊন নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছিল। সে কাফের হওয়া সত্ত্বেও তার বিশ্বাস ছিল যে, আল্লাহ আরশের উপর আছেন। ফেরাঊন বলল, ‘হে হামান! তুমি আমার জন্য এক সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরী কর, যাতে আমি অবলম্বন পাই আসমানে আরোহণের, যেন আমি দেখতে পাই মূসা (আঃ)-এর মা‘বূদকে (মুমিন ৪০/৩৭-৩৮)

সালাফে ছালেহীন থেকে আমরা যা পাই তা হচ্ছে, আল্লাহ আসমানের উপর আরশে অবস্থান করছেন। আবুবকর (রাঃ) থেকে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর ওফাত হয়, আবু বকর (রাঃ) এসে তাঁর (ﷺ) কপালে চুমু খেয়ে বলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি জীবনে ও মরণে উত্তম ছিলেন। এরপর আবু বকর (রাঃ) বলেন, হে মানব জাতি! তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ইবাদত করতে, তারা জেনে রাখ যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর ইবাদত কর তারা জেনে রাখ যে, আল্লাহ আকাশের উপর (আরশে)। তিনি চিরঞ্জীব।[10]

ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, من قال لا أعرف ربي في السماء أم في الأرض فقد كفر لأن الله تعالى يقول الرحمن على العرش استوى وعرشه فوق سبع سموات. ‘যে বলবে যে, আল্লাহ আসমানে আছেন, না যমীনে তা আমি জানি না, সে কুফরী করবে। কেননা আল্লাহ বলেন, রহমান আরশে সমাসীন। আর তার আরশ সপ্ত আকাশের উপর।[11]

ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو منه مكان- ‘আল্লাহ আকাশের উপর এবং তাঁর জ্ঞানের পরিধি সর্বব্যাপী বিস্তৃত। কোন স্থানই তাঁর জ্ঞানের আওতার বহির্ভূত নয়’।[12]

ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন,

القول في السنة التي أنا عليها ورأيت أصحابنا عليها أهل الحديث الذين رأيتهم وأخذت عنهم مثل سفيان ومالك وغيرهما الاقرار بشهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله وأن الله تعالى على عرشه في سمائه يقرب من خلقه كيف شاء وأن الله تعالى ينزل إلى سماء الدنيا كيف شاء-

‘সুন্নাহ সম্পর্কে আমার ও আমি যেসকল আহলেহাদীস বিদ্বানকে দেখেছি এবং তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছি যেমন সুফিয়ান, মালেক ও অন্যান্যরা, তাদের মত হল এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোন (হক্ব) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আললাহর রাসূল। আর আল্লাহ আকাশের উপর তাঁর আরশে সমাসীন। তিনি যেমন ইচ্ছা তাঁর সৃষ্টির নিকটবর্তী হন এবং যেমন ইচ্ছা তেমন নীচের আকাশে অবতরণ করেন’।[13]

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর পুত্র আব্দুল্লাহ বলেন,

قيل لأبي ربنا تبارك وتعالى فوق السماء السابعة على عرشه بائن من خلقه وقدرته وعلمه بكل مكان قال نعم لا يخلو شيء من علمه.

‘আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি থেকে দূরে সপ্তম আকাশের উপরে তাঁর আরশে সমাসীন। তাঁর ক্ষমতা ও জ্ঞানের পরিধি সর্বত্র বিস্তৃত। এর উত্তরে তিনি (ইমাম আহমাদ) বলেন, হ্যাঁ! তিনি (আল্লাহ) আরশের উপর সমাসীন এবং তাঁর জ্ঞানের বহির্ভূত কিছুই নেই।[14]

[চলবে]

হাফেয আব্দুল মতীন
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।​



[1]. ইমাম ইবনু তায়মিয়া, মাজমূউ ফাতাওয়া ৩/১৩৫।
[2]. শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া, আর-রিসালা আত-তাদাম্মুরিয়্যাহ, পৃঃ ২০।
[3]. বুখারী হা/৩১৯৪ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/২৩৬৪ ‘দো‘আ’ অধ্যায়, ‘আল্লাহর রহমতের প্রশস্ততা’ অনুচ্ছেদ।
[4]. তিরমিযী হা/৩৫৫৬, ইবনু মাজাহ হা/৩৮৬৫, হাদীস ছহীহ।
[5]. বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; আবুদাঊদ হা/১৩১৫; ইবনু মাজাহ হা/১৩৬৬; মিশকাত হা/১২২৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘তাহাজ্জুদের প্রতি উৎসাহিতকরণ’ অনুচ্ছেদ।
[6]. ছহীহ মুসলিম হা/৫৩৭ ‘মসজিদ সমূহ ও ছালাতের স্থানসমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[7]. ছহীহ মুসলিম হা/১২১৮ ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৯।
[8]. বুখারী হা/৭৪২০ ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২০।
[9]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/৫৮৬২।
[10]. বুখারী, আত-তারীখ, ১ম খন্ড, পৃঃ ২০২; ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ ৮৩-৮৪; আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃঃ ৪৭০।
[11]. ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ ৯৯।
[12]. ঐ, পৃঃ ১০১।
[13]. ঐ, পৃঃ ১২২।
[14]. ঐ, পৃঃ ১৫২-১৫৩।
 
Back
Top